দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সর্বত্র কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনায় খোলা ড্রেনে রীতিমত হা করে আছে মৃত্যুফাঁদ। গত ২ মাসে নগরীর বিভিন্নস্থানে শুধুমাত্র ড্রেনে পড়েই কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ড্রেনের পানিতে হারিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়নি গত এক মাসেও। সর্বশেষ গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর)রাতে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে গিয়ে খোলা ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হয় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া।
দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অনুসন্ধান করে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। নগরজুড়ে ড্রেনগুলো স্ল্যাব বা ঢাকনাবিহীন মৃত্যুফাঁদ হয়ে থাকলেও দায় এড়াচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে দীর্ঘ তিন বছর ধরে চলমান রয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ। এর পাশাপাশি নগরীতে নির্মিত এচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এসব চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নগর জুড়ে খোড়াখুঁড়ি এবং খানাখন্দকে একাকার হয়ে আছে। এর মধ্যে বিভিন্নস্থানে সাধারণ মানুষের নিরাপদ চলাচলের জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেনগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব মৃত্যুফাঁদে পড়ে একের পর এক সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩০ জুন দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেট মেয়র গলিতে ড্রেনের পাশে কোনো প্রতিরোধ দেয়াল না থাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে বড় ড্রেনে পড়ে যায়। এতে খাতিজা বেগম (৬৫) ও সিএনজি চালক মো. সুলতান (৩৮) মারা যান। গত ২৫ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় রাস্তার পাশ ধরে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার সময় পানিতে ডুবে থাকা উন্মুক্ত ড্রেনে ডুবে নিখোঁজ হন ছালেহ আহমেদ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
গত এক মাস অতিক্রান্ত হলেও তারা লাশটি উদ্ধার করা যায়নি। ২৬ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে নগরীর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাট রোডের ড্রেন থেকে অজ্ঞাত (৩৫) এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একইভাবে রাস্তার পাশ ধরে হাঁটার সময় অসাবধনতাবসত ড্রেনে পড়ে এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাত ১১টার দিকে বাইরের কাজ সেড়ে রাস্তার পাশ ধরে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় উন্মুক্ত ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী সেহরিন সাদিয়া মাহবুব। ফায়ার সার্ভিস দীর্ঘ প্রায় ৫ ঘণ্টা চেষ্ঠা চালিয়ে প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ৭০ ফুড গভীরে আবর্জনা সরিয়ে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে।
ড্রেনে পড়ে ছাত্রী নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ নগরীতে ড্রেনে পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় কোনো দায় নিতে রাজি হয়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, এই ধরনের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। তবে এতে সিটি করপোরেশনের কোনো হাত নেই। যেসবস্থানে উন্নয়ন কাজের জন্য ড্রেন উন্মুক্ত রয়েছে সেসব সড়কের নিয়ন্ত্রণ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সড়কগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা জন নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মুলত সিডিএ’র অবহেলা এবং অসতর্কতার কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। মেয়র আরও জানান, যারা প্রকল্পের কাজ করছে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। অবহেলা আছে। অবশ্যই আছে। যারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে তাদের অবহেলা আছে।
অপরদিকে, এই ঘটনায় দায় নিতে নারাজ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। একের পর এক ড্রেনে মানুষ মরার ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সিডিএ’র প্রধান স্থপতি শাহিনুল ইসলাম খান এই প্রসঙ্গে জানান, সিডিএ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও ফুটপাত নিরাপদ করা দায়িত্ব পুরোপুরি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। সিডিএ’র নয়। ড্রেনে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন জানান, এর আগে কখনো ড্রেনে পড়ে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।